নিয়োগসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে অনেক শিক্ষক এমপিও সুবিধা পেয়েছেন। আবার একই সমস্যা নিয়ে এমপিওবঞ্চিত হয়েছেন অনেকে। তারা ঘুরছেন শিক্ষা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। বঞ্চিতদের অভিযোগ- যারা অফিস ‘ম্যানেজ’ করতে পেরেছেন তারা সুবিধা পেয়েছেন। তবে প্রশাসন জানিয়েছে- এমপিওভুক্তির নীতিমালার জটিলতায় তারা এমপিও দিতে পারছেন না।
জানা গেছে, ২০০৪ সালের বিধিমালায় মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠানে একজন কম্পিউটারবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ করার বিধান ছিল। ২০১৮ সালের বিধিমালায় সর্বপ্রথম নিম্নমাধ্যমিক স্তরের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগের বিধান চালু হয়। তবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক- দুই স্তরের জন্য এ বিষয়ে শিক্ষকের পদ একটি। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন ৬ শতাধিক শিক্ষক।
এমপিওবঞ্চিত কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, এমপিও জটিলতায় চাকরির অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। করোনাকালে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। আবার সরকারি এমপিও সুবিধাও তারা নিতে পারছেন না। নিয়োগসংক্রান্ত সমস্যার কারণে
তারা দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তারা মাউশির আঞ্চলিক অফিস ‘ম্যানেজ’ করে এমপিও নিয়েছেন। অথচ একই সমস্যা নিয়ে অন্যরা বঞ্চিত রয়ে গেছেন। তাদের প্রশ্ন, একই সমস্যায় কেউ এমপিও পাবেন আর কেউ পাবেন না, তা কিভাবে হতে পারে? শিক্ষকদের অভিযোগ খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক বলেন, ‘কেউ পাবে আবার কেউ পাবে না, এমনটি হতে পারে না। সব সমাধান হবে।’ এমপিও পাওয়া এবং না পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা জানান, যারা ২০১২ সালের পরে নিয়োগ পাওয়াদের এমপিও দেওয়া হয়েছে। ম্যানেজ হয়ে কাউকে এমপিও দেওয়া হয়নি।
ম্যানেজ হয়ে এমপিও দেওয়া হয়নি বলে উপপরিচালক নিশ্চিত করলেও শিক্ষকদের দাবি তার কথা সত্য নয়। তাদের প্রশ্ন, ২০১২ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিও দেওয়া হয়েছে পদ সমন্বয় করে। তা হলে অন্যদের বেলায় তা না করে আবেদন বাতিল করা হয়েছে কেন?
নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেডারেশনের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেলোয়ারা খানম জানান, মাগুরা সদরে কচুন্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া কম্পিউটার শিক্ষক মায়া চৌধুরীকে পদ সমন্বয় করে এমপিও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা আরও আছে। যারা অফিস ম্যানেজ করতে পেরেছেন, তারাই এমপিওভুক্ত হতে পেরেছেন। আমি ২০০৪ সালে নিয়োগ পেয়েও এমপিওভুক্ত হতে পারিনি। আমার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের নীতিমালার শতাধিক শিক্ষক পদ সমন্বয়ের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু আমরা ৬৩২ জন শিক্ষক অফিস ম্যানেজ করতে না পারায় এমপিওভুক্ত হতে পারিনি।
২০১২ সালের আগে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মাগুরার মোহাম্মদপুরে বেথুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। ওই শিক্ষক এমপিও পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কিভাবে এমওিভুক্ত হলেন তা তিনি বলতে চাননি।
দীর্ঘ ১০ বছর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ২০১৯ সালে নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ২৩ অক্টোবর একযোগে ২ হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এবং পরে আরও সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিওভুক্ত হয়। নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে ২০১৮ সালের নতুন জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী করোনার ছুটির মধ্যেই শিক্ষক এমপিওভুক্তি শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু ২০০৪ সালের বিধিমালায় নিয়োগ পাওয়া কম্পিউটার শিক্ষকরা আটকে যান ২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায়।
Leave a Reply